নিজস্ব প্রতিনিধি, কোলকাতা:ভারতবর্ষের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল অখিলভারত হিন্দুমহাসভার এই বছর অভিনব পূজার থিম “পূজা পরিক্রমা উমার সাথে” বা “দুয়ারে দুর্গা”। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য দশ বছর বেহালায় হিন্দু মহাসভার অফিসে পূজা করার পর রুবি হাসপাতাল মোড়ে পূজাটি স্থানান্তরিত করা হয় । রুবি হাসপাতাল মোড়ে এই বছর তৃতীয় বর্ষের পূজা । বিগত দুই বছরের মত এবারও থাকছে পূজার থিমে চমক । প্রথমবার অসুরের সাথে গান্ধীর মুখের মিল থাকায় একটি অযাচিত বিতর্ক সৃষ্টি হয় । যদিও পূজার উদ্যোক্তারা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেন মিলটি নিতান্তই কাকতালীয় । তবে বিগত বছর তাদের পূজার থিম ছিল ভারতবর্ষে সনাতনীদের নিঃশর্ত নাগরিকত্ব প্রদান । উদ্বোধন করে ছিলেন মতুয়া সম্প্রদায়ভুক্ত রাজ্য সভার সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর । এই বছরও পূজার থিম অভিনব এবং অনিন্দ্যসুন্দর । হিন্দু মহাসভার রাজ্য সভাপতি ডক্টর চন্দ্রচূড় গোস্বামীর থিমের বিষয়ে বক্তব্য আমরা এবার সাত্ত্বিক পদ্ধতিতেই দুর্গা পূজা করতে চলেছি । তবে রুবি হাসপাতাল মোড়ে আমাদের পূজা স্থলে ষষ্ঠীর দিন মায়ের বোধনের পর থাকছে আসল চমক । একটি সুসজ্জিত ম্যাটাডোর বা ট্যাব্লো গাড়িতে করে দিনের নির্দিষ্ট সময় যখন রাস্তা তুলনামূলক ফাঁকা থাকবে তখন সমস্ত রকম ট্রাফিক ও প্রশাসনিক নিয়মবিধি মেনে আমাদের মা দুর্গা বা আমাদের ঘরের মেয়ে উমাকে নিয়ে বেহালা হিন্দু মহাসভার রাজ্য অফিস অঞ্চলের পাশাপাশি কিছু স্থানে যাওয়া হবে যেখানে কোন বড় পূজা না হওয়ার কারণে মানুষরা দুর্গোৎসবের আনন্দ থেকে বঞ্চিত থাকেন । আমাদের সুসজ্জিত ট্যাব্লো মূলত বাংলার উৎকর্ষ মানের কুটির শিল্পকে তুলে ধরবে যাতে কুটির শিল্পীদের প্রচার এবং উপার্জন হয় । এই পূজাতে কোন রাজনৈতিক রং বা প্রতিবাদী আবেগকে জুড়তে আগ্রহী নয় হিন্দুমহাসভা । ডক্টর চন্দ্রচূড় গোস্বামীর বক্তব্য অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ নিশ্চই সমাজে প্রয়োজন কিন্তু তার সাথে দুর্গাপূজাকে অবশ্যই গুলিয়ে ফেলা উচিত নয় কারণ দুর্গোৎসবের সাথে সরাসরি বাংলার গরীব মানুষদের অর্থনীতি সম্পৃক্ত । দরিদ্র মেহনতি মানুষ সারা বছর ধরে এই কয়েকটি দিনের জন্য অপেক্ষা করে যাতে কিছু উপার্জন করে তারা তাদের পরিবারের সদস্যদের মুখে একটু খাওয়ার বা গায়ে নতুন পোশাক তুলে দিতে পারে । এই সময়টাই কোন স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে থিম করতে গিয়ে যদি কোন অনভিপ্রেত পরিস্থিতি তৈরি হয় তাহলে ওই গরীব মানুষ গুলোর অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে । এর পরেও যদি ডক্টর তিলোত্তমাকে নিয়ে কোন থিম করা হয় তাহলে ডক্টর চন্দ্রচূড় গোস্বামীর বক্তব্য পূজা কমিটি গুলোর মাথায় রাখা উচিত বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন । তাই জাস্টিসের জন্য সত্যি যদি আন্দোলন করা হয় তাহলে আন্দোলনকারীদের ডক্টর তিলোত্তমার পাশাপাশি কলকাতায় আজ থেকে প্রায় কুড়ি বছর আগে হওয়া ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় কেসটি নিয়েও জাস্টিসের দাবিতে আন্দোলন করা উচিত । কারণ মানুষের বিশ্বাস এবং তথ্যপ্রমাণ বলছে ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় প্রকৃত অপরাধী ছিলেন না । ফলে প্রকৃত অপরাধীর শাস্তি না হওয়ায় ধনঞ্জয়ের পাশাপাশি হেঁতাল পারেখের আত্মাও আজ অবধি শান্তি পায়নি । তাই বিচারের বাণী আজও নীরবে নিভৃতে কাঁদছে ।