ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের বিরুদ্ধে কৃষকদের প্রতিবাদ,জমি রক্ষায় তীব্র আন্দোলন
নিজস্ব প্রতিনিধি, পশ্চিম মেদিনীপুর:
ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের কাজ শুরুর আগেই জটিলতা। জমি জরিপের কাজ শুরু হতেই কৃষকদের একাংশ তীব্র আন্দোলনের পথে নামলেন। দাসপুর ব্লকের বৈকুণ্ঠপুর চন্দ্রেশ্বর খাল থেকে সুরতপুরের শিলাবতী নদী পর্যন্ত নতুন খাল খননের প্রস্তাব নিয়ে তৈরি হয়েছে তুমুল বিতর্ক। কৃষকদের দাবি, এই প্রকল্পের আওতায় খাল খনন করা হলে এলাকার বহু তিন ফসলি জমি এবং বসতবাড়ি চিরতরে নষ্ট হয়ে যাবে। এমনকি বন্যার ঝুঁকিও অনেকগুণ বেড়ে যাবে।
অভিযোগ উঠেছে, ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের বাইরের পরিকল্পনা হিসেবে এই নতুন খাল খননের প্রস্তাব আনা হয়েছে। জমি অধিগ্রহণের নাম করে কৃষকদের সম্পত্তি কেড়ে নেওয়ার চক্রান্ত চলছে বলে দাবি করেছেন আন্দোলনকারী কৃষকরা। এই ইস্যুতে কৃষকদের মধ্যে প্রবল ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা স্থানীয় কৃষকরা একটি কমিটি গঠন করে জানিয়েছেন, তারা জমি ছাড়ার প্রশ্নেই আপস করবেন না।
কৃষকদের বক্তব্য, তিন ফসলি জমি এবং বসতবাড়ি ধ্বংস করে যদি খাল খনন করা হয়, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম চরম বিপদের সম্মুখীন হবে। তাদের দাবি, প্রকল্পটি কার্যকর করার আগে সরকার তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসুক এবং প্রকল্পের পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনা করুক।
ঘটনা প্রসঙ্গে,পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সদস্য তথা কৃষি কর্মাধ্যক্ষ আশিস হুদাইত বলেন, “আমি নিশ্চিত, আমাদের কৃষক ভাইরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবে বৃহত্তর স্বার্থে কিছু জমি উৎসর্গ করতে রাজি হবেন। আমাদের সরকার কৃষকদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেবে এবং তাদের স্বার্থের প্রতি পূর্ণ সহানুভূতিশীল থাকবে। আমাদের সরকার কখনোই কৃষক-বিরোধী নয়।”
এদিকে এই ইস্যু নিয়ে রাজ্যের বিরোধী দল গেরুয়া শিবির চরম কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছে।ঘাটালের বিজেপি বিধায়ক শীতল কপাট এই ইস্যুতে কড়া ভাষায় রাজ্য সরকারকে আক্রমণ করে তিনি বলেন, “ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান অবশ্যই হওয়া উচিত। আমরা চাই এই প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়িত হোক। কিন্তু কৃষকদের তিন ফসলি জমি এবং বসতবাড়ি অধিগ্রহণ করে তাদের জীবিকা ধ্বংস করা কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়। রাজ্য সরকার মনে করছে, সামান্য বিরোধিতা হলেই এই প্রকল্প চিরতরে হিমঘরে পাঠিয়ে দেওয়া যাবে।”
প্রসঙ্গত,ঘাটাল মাস্টার প্ল্যান দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক বিতর্ক এবং প্রশাসনিক জটিলতার কারণে থমকে রয়েছে। বর্তমানে এই প্রকল্পে নতুন খাল খননের প্রস্তাব নিয়ে কৃষকদের আন্দোলন শুরু হওয়ায় প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে আবারও অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। কৃষকদের আন্দোলন ও রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্যে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের ভবিষ্যৎ কোন দিকে গড়াবে, সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন!