সঙ্কেত ডেস্ক: “পাগলের সঙ্গে যাবি পাগল হবি, হেরবি রসের নব গোরা…সার করছে ভাঙ ধুতরা” পরণে গেরুয়া আলখাল্লা, মাথায় পাগড়ি, কিম্বা ঝুটিবাধা কণ্ঠে তুলসীর মালা কণ্ঠি, বগলে গুপিযন্ত্র নিয়ে ঘুঙুরের তালে নেচে চলে উদাস বাউল, সঙ্গের বোষ্টুমিও খরতাল নিয়ে তাল ধরছে, আটশো বছরের ঐতিহ্যশালী কেন্দুলীর জয়দেব মেলায় আসল মজাই যে বাউল। দোতারা, একতারা আর দেতত্ত্বের সাধনা, সিদ্ধ গানের পসরা নিয়ে আজো হাজির দেশ বিদেশের বাউল বাউলিনীরা, কেন্দুলী বটতলায় সারা রাতের আসর শেষে বর্তমানে মজে যাওয়া অজয়ের হাঁটুজলে ডুব দিয়ে মুক্তি নেশাটাই যে আলাদা আর আলাদা বলেই আধ্যাত্মিক রসের সন্ধানে ফিবছর ভিড় বাড়ে এখানে। সংক্রান্তির ভোরে পুব আকাশে রঙ ফোটার আগেই সারতে হয় পুণ্যি স্নান, মানুষের বিশ্বাস এই পুন্য লগ্নে পুণ্যসলিলা গঙ্গার স্রোত আসে উজিয়ে। সকালের সিদ্ধ হাওয়া সাধুমেলার ভিড় হাজারো বাউল কণ্ঠে বেজে ওঠে দেহতত্ত্ব, প্রেমতত্ত্বের গান। কবি জয়দেব পদ্মাবতীর কৃষ্ণসাধন পীঠ বাউলগান কীর্তন বাঁশি ডুগডুগির শব্দে লক্ষ লক্ষ গ্রাম্য ও শহুরে পুণ্যার্থীর হাসি গান
মিলেমিশে তৈরি করে অদ্ভুত বাতাবরণ। কদম্বখণ্ডীর ঘাটকে ঘিরে তিনদিনের এই মেলায় ইতস্তত বাবাজীদের কলকের ধোঁয়া, যেন শীতের হাত থেকে মুক্তির মিথ্যা প্রচেষ্টা। অজয়তীরে গজিয়ে ওঠা অস্থায়ী আখড়ার বিচালির গদিতে বসে খ্যাপা বাউলের গান কিম্বা কোন এক বিশাখা বোস্টুমির কৃষ্ণ ভজনার ফাঁকে চাইলেই মিলতে পারে হাল আমলের হিন্দি গানের সুরে প্যারোডি। তবে আজকের মেলার বহিরাঙ্গটি হতাশ করে আমাদের, নদীর চরে প্রাতকৃত সারেন কয়েক হাজার মানুষ, মাইক চলছে তারস্বরে, আছে মনখারাপ করা সুরহীন হিন্দি গানের দাপট, রয়েছে দেশি বিদেশি ক্যামেরায় স্নান দৃশ্য ধরে রাখার প্রয়াস, সেই সঙ্গে ভিড় বাড়ছে শহুরে আমোদপ্রিয মানুষজনের। মেলায় নেশা করার প্রবণতা বাড়ছে। মেলায় ভিড় বাড়ছে কেতাদস্তুর পোষাকে শহুরে কৃষ্ণ, রাধাদের। পেখমছাড়া এক দল কার্তিক কুমারের দৃষ্টি আটকে থাকে নদী ঘাটে, মনে মনে যে বস্ত্রহরণ পর্বের কথা মনে করে তারা, সিগারেটের সুখটান দিতে নদীর ঘাটে যেন তারাও খুঁজে পায় মুক্তির আনন্দ। কবি জয়দেব ও তার সহধর্মীনী পদ্মাবতীর শ্রীকৃষ্ণ সাধনক্ষেত্রে তারাই যেন হয়ে ওঠে এক একটা কলির কেষ্ট। তবুও কেন জানিনা কীসের টানে লক্ষ মানুষের ঢল নামে ও প্রত্যন্ত গাঁয়ে। শীর্ণকায় রূপালী ফিতের মতো অজয়ের চরে এখনো জমায়েত হয় তত্ত্বতলাসীর দল। এখনো এই মেলাকেই সাক্ষী রেখে কণ্টী বদল করে কোনো বোস্টুমী, কেউ বা খুঁজে পায় তার মনের পরশ পাথরকে।