March 22, 2025

সময় সঙ্কেত

প্রবাহমান সময়ের পূর্বাভাষ

মৌনী অমাবস্যায় মহাকুম্ভে অমৃতস্নান, যত দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি পরিত্রাণ

বিকে ড. স্বপন রুদ্র: আজ প্রয়াগরাজের মহাকুম্ভে মৌনী অমাবস্যার পুন‍্যতিথিতে ব্রহ্মমুহূর্ত থেকে এখনো পর্যন্ত ত্রিবেণী সঙ্গমে শ্রদ্ধালু ও ভক্তবৃন্দের অমৃত স্নান লাগাতার চলছে। ইতিমধ্যে প্রায় সাড়ে তিন কোটি পুন‍্যার্থী তাদের পুন‍্য স্নান সেরে ফেলেছেন, গতকাল সারাদিনে এই সংখ্যাটা ছিল প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি। মৌনী অমাবস্যার এই তিথি এত গুরুত্বপূর্ণ কেন? কী এমন মহত্ত্ব রয়েছে এই বিশেষ তিথিতে? এর পিছনে অনেক কারণ কথিত আছে, এক এক করে উল্লেখ করা করি–প্রথমত, এই দিনটি মনুর জন্মদিন হিসেবে ধরা হয় এবং তাঁর নাম থেকেই এই অমাবস্যাকে মৌনী অমাবস্যা নামে অভিহিত করা হয় যা মাঘ মাসের কৃষ্ণ অমাবস্যার এক বিশেষ দিন। এবারের মহাকুম্ভে মোট চারটি শাহী স্নানের (কুম্ভের সময় যে কোন পবিত্র নদীতে স্নানকেই শাহী স্নান বা রাজকীয় স্নান আখ‍্যা দেওয়া হয়) তারিখ নির্দিষ্ট রয়েছে যার মধ‍্যে প্রথমটি ছিল 14-ই জানুয়ারি মকর সংক্রান্তির, দ্বিতীয়টি আজ অর্থাৎ 29 জানুয়ারি, তৃতীয়টি রয়েছে বসন্ত পঞ্চমী উপলক্ষে 3 ফেব্রুয়ারি এবং চতুর্থটি 12 ফেব্রুয়ারি। অধিকাংশ পুন‍্যার্থীর লক্ষ্য থাকে কোন একটি শাহী লগ্নে সম্পন্ন করা যার মধ্যে আজকের এই মৌনী অমাবস্যার ক্ষণটি সর্বোত্তম। তাই আজ কাতারে কাতারে লোকের এত ভীড়, এত জন-সমাগম। কিন্তু তা সত্ত্বেও যে কোন প্রকারে স্নান সারতে হবে কারণ আজকের এই দিনে নদীর জল যে অমৃতে পরিণত হয়, আর তাইতো এই স্নানকে অমৃতস্নান বলে। দ্বিতীয়ত, এই দিনের অন‍্য তাৎপর্য হল– আধ‍্যাত্মিক শুদ্ধিকরণ হেতু স্নানকালে পিতৃতর্পণ, সূর্যদেব ও পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ, সবার প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা জানানো এবং নিজ নিজ পরিবারের জন‍্য মঙ্গল কামনা করা। এদিনে পুন‍্যার্থীগণের প্রায় সবাই উপবাসে রেখে স্নান করেন। তৃতীয়ত, সারাদিন মৌনব্রত পালন করা নিদেনপক্ষে অন‍্য দিনের মতো চেঁচামেচি না করা বা কারোকে কটু কথা না বলা। চতুর্থত, এদিন সাধু-মহাত্মাদের দর্শনের সাথে কিছু দান-ধ‍্যানের ব‍্যাপারও থাকে।
যাই হোক, আজ মানুষের বন‍্যায় প্রয়াগরাজে প্লাবন দেখা দিয়েছে যা সচরাচর চোখে পড়ে না এবং মিডিয়ার সুবাদে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কয়েকশো কোটি মানুষ এই ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন। মহাকুম্ভের খবর এবার এতটাই সুদূর প্রসারিত ও চারদিকে এতই পরিব‍্যপ্ত যে দেশ-বিদেশ থেকে এত লোক ছুটে ছুটে আসছেন যে আজ 29 জানুয়ারি অবধি মহাসঙ্গমের এই মিলনমেলায় শ্রদ্ধালুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় 20 কোটিতে, এখনো 18 দিন বাকী। খবরে দেখা যাচ্ছে আশেপাশের দেশ থেকে আরো অনেকে আসার জন্য তৈরী, কিন্তু ভিসার কারণে তারা আসতে পারছেন না। তা সত্ত্বেও মনে হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত সব হিসেব-নিকেশ ছাড়িয়ে যাবে।

কিন্তু কেন এত মানুষের এত আকষর্ণ, কী কারণে কিসের টানে? তাও শুধুমাত্র এদেশের মানুষই নন, বিদেশেরও হাজার হাজার মানুষ আছেন। এদেশের সনাতনী হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজনের ভাবালুতা ও আবেগ আমরা সবাই জানি, কিন্তু বিদেশের এত মানুষ? তারা তো সহজে ভোলেন না? তার মানে এই দাঁড়ায় বা এই সত‍্য প্রতিভাত হয় যে ভারতবর্ষের মাটিতে এমন কিছু আছে যার টান উপেক্ষা করা যায় না বা বলা ভালো মুশকিল। সঙ্গমস্থল এখন পুরোপুরি এক অতি উচ্চমানের তরঙ্গায়িত স্থান কারণ সে যে লক্ষ-কোটি আত্মার সঙ্গে পরমাত্মার মিলনমেলাও বটে। বিধাতা যেন নিজেই সবাইকে টেনে টেনে নিয়ে আসেন এবং তারপর তাদের এক অদৃশ্য বন্ধনে বেঁধে ফেলেন, তাইতো এই দেশ বিশ্বের সেরা। আগে যা হয়েছে হয়েছে, কিন্তু আজ ভারতবর্ষ যেন আবার নতুন করে জেগে উঠেছে। তাই অতুলপ্রসাদ সেনের সেই গানটি গাইতে ইচ্ছে করে—–
বল, বল, বল সবে, শত বীণা-বেণু-রবে,
ভারত আবার জগৎ-সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে।

About The Author

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Copyright © All rights reserved. | Newsphere by AF themes.