নিজস্ব প্রতিনিধি: ঠিক দুই দিন আগে কনভেনর ডক্টর চন্দ্রচূড় গোস্বামীর নেতৃত্বে “ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় মামলা পুনর্বিচার মঞ্চের” সদস্যরা ভারতের রাষ্ট্রপতি শ্রীমতী দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি.উআই.চন্দ্রচূড়কে চিঠি পাঠানো এবং আইনমন্ত্রী শ্রী মলয় ঘটকের সাথে সাক্ষাৎ করে হাতে ডেপুটেশন তুলে দিয়ে বহু চর্চিত ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় ফাঁসি মামলাটির পুনর্বিচারের জন্য আবেদন করা হয়েছে । সূত্রের খবর ইতিমধ্যেই আইনি প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে । মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যস্ত থাকায় সম্মুখে ডেপুটেশন দেওয়ার সুযোগ হয়নি ঠিকই কিন্তু মঞ্চের প্রতিনিধিদের স্থির বিশ্বাস মুখ্যমন্ত্রী নিশ্চই তাঁর মানবিক রূপের পরিচয় দিয়ে ওনাদের ডেপুটেশন গ্রহণ করবেন এবং ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের বাসস্থান ছাতনা অঞ্চলের মানুষের আবেগকে গুরুত্ব দিয়ে কুড়ি বছর আগে একজন গরীব পুরোহিত ঘরের সন্তানের প্রতি হওয়া অবিচারের যন্ত্রণায় প্রলেপ দেবেন কেসটি রিওপেন করতে সাহায্য করার মাধ্যমে । এরই মধ্যে আজ কলকাতা শহর জুড়ে একদিকে যেমন চলল সই সংগ্রহ অভিযান সেই রকম অন্য দিকে হাজরা, কালীঘাট, ভবানীপুর, শ্যামবাজার, রবীন্দ্র সদন, কলেজস্ট্রিট, কলকাতা প্রেস ক্লাব সহ একাধিক জায়গায় পোস্টার পড়তে শুরু করেছে । পোস্টারে একদিকে যেমন জুনিয়র ডাক্তারদের সরাসরি মানবিক রূপ দেখিয়ে কাজে ফিরতে এবং ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় মামলা পুনর্বিচার মঞ্চে যোগদান করে নিরপেক্ষতার পরিচয় দিতে বলা হয়েছে সেই রকম ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় এবং হেতাল পারেখ উভয়ের জন্য জাস্টিস এবং সিবিআই তদন্ত দাবি করা হয়েছে । এই প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে ডক্টর চন্দ্রচূড় গোস্বামীর স্পষ্ট বক্তব্য ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের যখন ফাঁসি হয় তখন আমি ছোট ছিলাম । কিন্তু আমার আজও মনে আছে দূরদর্শনে একদিকে যখন ধনঞ্জয় বাবুর মা বাবা, স্ত্রী এবং পরিবারের সদস্যদের বুক ফাটা হাহাকার দেখানো হচ্ছিল তখন অন্যদিকে ফাঁসির দড়িতে তেল মাখানো এবং তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্যের স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য্যের নেতৃত্বে ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ আন্দোলন করা হচ্ছিল । সেই সময় ছাতনা নাগরিক কমিটির সদস্যরা বাঁকুড়া জেলা সহ প্রায় সারা বাংলা জুড়ে আপ্রাণ চেষ্টা করে ছিলেন কিন্ত সম্ভবত আসল অপরাধীকে আড়াল করতে রাষ্ট্র শক্তি একজন হতদরিদ্র পুরোহিত ঘরের সন্তান ধনঞ্জয়কে চোদ্দ বছর জেল খাটার পরও ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেয় । আমরা জানি সুপ্রিম কোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করা যায়না কিন্তু মানুষের বিশ্বাস এই মামলার পুনর্বিচার হলে ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় মৃত্যুর এত বছর পরেও উনি এবং ওনার পরিবার ধর্ষক পরিচয় থেকে মুক্তি পাবেন । এতে একদিকে যেমন ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের আত্মা শান্তি পাবে সেই রকম আসল অপরাধী চিহ্নিত হলে হেঁতাল দেবীর অতৃপ্ত আত্মাও শান্তি পাবেন । ধনঞ্জয় মামলা আসলে বিচারের নামে প্রহসন হয়েছে কারণ এই কেসে একাধিক অসঙ্গতি রয়েছে । কারো অনুপস্থিতিতে তার বাড়ি থেকে কিছু জিনিস যেমন ঘড়ি, বোতাম এবং গলার চেইন ইত্যাদি উদ্ধার করা হয়েছে বলে রিপোর্ট দিয়ে কখনোই কাউকে ফাঁসির মত চরমতম শস্তি দেওয়া উচিৎ নয় । যে অভিযুক্ত সে ফেরার হওয়ার পরও বাড়িতে চুরি করা জিনিসগুলো রেখে দিল কখন পুলিশ এসে উদ্ধার করবে এটা হাস্যকর । যারা ধনঞ্জয়ের বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষী দিয়েছিল তাদের অধিকাংশই পরে স্বীকার করেছে পুলিশ ভয় দেখিয়ে নিজেদের মত করে বয়ান লিখে সই করিয়ে নিয়েছে । কিন্তু আরো গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী যারা হতে পারতেন তাদের আদালতে বয়ান দিতে ডাকাই হয়নি । সেলুলজিকাল টেস্টের অধিকাংশ রিপোর্টই অসমাপ্ত এবং সেখানে লেখা আছে “নো কমেন্টস”। ফরেনসিক ল্যাবে পাওয়া গলার চেইন এক জায়গায় লেখা আঠেরো ইঞ্চি আরেক জায়গায় লেখা বাইশ ইঞ্চি । পুলিশের কুকুরকে যে রক্তমাখা রুমাল এবং কাগজ শোকানো হয়ে ছিল সেগুলি পরে ভিজে অবস্থায় পাওয়া যায় । এই বিষয়ে তদন্তের উপর ভিত্তি করে সত্য ঘটনা অবলম্বনে ধনঞ্জয় নামে যে সিনেমা হয়েছে সেটি দেখলে পরিস্কার বোঝা যায় এটি অনার কিলিং এর কেস হওয়ার সম্ভাবনা সর্বাধিক । আসলে সোনার দোকানের মালিক পারেখ পরিবারের আর্থিক প্রতিপত্তির কাছে তৎকালিক প্রশাসন বিক্রি হয়ে যায় এবং বিচার ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে । ফলে আসল অপরাধীদের আড়াল করতেই ধনঞ্জয়কে খুন করেছিল রাষ্ট্রশক্তি । তাই মানুষের বিশ্বাস একশ শতাংশ সঠিক, বিচারের বাণী আজও নীরবে নিভৃতে কাঁদে । বিদেশে ইতিপূর্বে মৃত্যুদন্ডের বহু বছর পর কেস রিওপেন করে নিরপরাধ মৃত ব্যক্তি ও তার পরিবারকে তাদের হৃত সম্মান ফিরিয়ে দেওয়ার মত নিদর্শন রয়েছে । কিন্তু ভারতে এখনো সেই রকম কোন উদাহরণ আমাদের জানা নেই । আমাদের স্থির বিশ্বাস গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মানুষের আবেগ যেহেতু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তাই কেন্দ্র এবং রাজ্য উভয় সরকার নিশ্চই মানুষের সেই আবেগকে সম্মান দিয়ে ধনঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় ও তার পরিবার এবং ছাতনা সহ সমগ্র বাঁকুড়া জেলার মানুষের প্রতি হওয়া এই অবিচারকে সংশোধন করতে সাহায্য করবেন । মৃত্যুর এত বছর পর কলঙ্ক ঘুঁচলে একদিকে যেমন ধনঞ্জয় বাবু এবং হেঁতাল দেবী উভয়ের আত্মা শান্তি পাবে সেই রকম আমাদের দেশ এবং আমাদের রাজ্যও পৃথিবীর বুকে এই দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে যে দেরিতে হলেও প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছে “সত্যমেব জয়তে” ।

By admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *